তৃতীয় অধ্যায় [প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ]

1/8/20241 min read

বিভাগ 'ক'

● ১. সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো:

১.১ রংপুর কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়-

(ক)১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে, (খ) ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে, (গ) ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে, (ঘ) ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে।

উত্তরঃ (খ) ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে।

১.২ সুইমুন্ডা নেতৃত্ব দেন-

চুয়াড় বিদ্রোহে, কোল বিদ্রোহে, সাঁওতাল বিদ্রোহে, মুন্ডা বিদ্রোহে।

উত্তরঃ (খ) কোল বিদ্রোহে।

১.৩ ধরতি আবা নামে পরিচিত ছিলেন-

সিধু, কানহু, বীরসিং, বিরসা মুন্ডা।

উত্তরঃ (ঘ) বিরসা মুন্ডা।

১.৪ চুয়াড় বিদ্রোহ দমন করেন-

লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস, লর্ড ওয়েলেসলি, লর্ড ডালহৌসি, লর্ড বেন্টিংঙ্ক।

উত্তরঃ (খ) লর্ড ওয়েলেসলি।

১.৫ পাইকের কাজ করতো-

চুয়াড়রা, কোলরা, সাঁওতালরা, মুন্ডারা।

উত্তরঃ (ক) চুয়াড়রা।

১.৬ উলগুলান নামে পরিচিত-

চুয়াড় বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, মুন্ডা বিদ্রোহ, কোল বিদ্রোহ।

উত্তরঃ (গ) মুন্ডা বিদ্রোহ।

১.৭ কোলরা প্রথম বিদ্রোহ শুরু করে-

রাঁচিতে, সিংভূমে, মানভূমে, হাজারিবাগে।

উত্তরঃ (ক) রাঁচিতে।

১.৮ স্বাধীন মুন্ডা রাজ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন-

সুই মুন্ডা, গয়া মুন্ডা, বীরসা মুন্ডা, সুগান মুন্ডা।

উত্তরঃ (গ) বীরসা মুন্ডা।

১.৯ বাংলার ওয়াট টাইলার নামে পরিচিত ছিলেন-

বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস, দিগম্বর বিশ্বাস, বিশ্বাস ভ্রাতৃদ্বয়, বিশ্বনাথ সর্দার।

উত্তরঃ (গ) বিশ্বাস ভ্রাতৃদ্বয়।

১.১০ নীল কমিশন কার নেতৃত্বে গঠিত হয়- সীটন কার, আর, টেম্পল, ফর্গুসন, জন পিটার গ্রান্ড।

উত্তরঃ (ঘ) জন পিটার গ্রান্ড।

বিভাগ- 'খ'

উপবিভাগ-২.১

● একটি বাক্যে উত্তর দাও।

২.১.১ ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

উত্তরঃ ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলির সৈয়দ আহমদ ব্রেভলী।

২.১.২ গোলাম মাসুম কে ছিলেন?

উত্তরঃ গোলাম মাসুম ছিলেন তিতুমিরের প্রধান সেনাপতি।

২.১.৩ দার-উল-হারব কথার অর্থ কী?

উত্তরঃ দার-উল-হারব কথাটির অর্থ হল শত্রুদের দেশ বা বিধর্মীদের দেশ।

২.১.৪ ভাগনাডিহি বিখ্যাত কেন?

উত্তরঃ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে জুন ভাগনাডিহির মাঠে সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু হয়। এই জন্য ভাগনাডিহি বিখ্যাত।

২.১.৫ নোয়ামিয়া কে ছিলেন?

উত্তরঃ নোয়ামিয়া ছিলেন বাংলার ফরাজি আন্দোলনের একজন নেতা। তাঁর আসল নাম আব্দুল গফুর।

২.১.৬ ফরাজি কথার অর্থ কী?

উত্তরঃ ফরাজি কথাটির অর্থ হল, আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত বাধ্যতামূলক কর্তব্য।

২.১.৭ বাংলার নানাসাহেব নামে কে পরিচিত ছিলেন?

উত্তরঃ নীল বিদ্রোহের নেতা রামরতন মল্লিক বাংলার নানাসাহেব নামে পরিচিত ছিলেন।

২.১.৮ রাণী শিরোমণি বিখ্যাত কেন?

উত্তরঃ মেদিনীপুরের কর্ণগড়ের রাণী শিরোমণি চুয়াড় বিদ্রোহে নেতৃত্ব প্রদান করার জন্য স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।

২.১.৯ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রথম উপজাতি বিদ্রোহ কোনটি?

উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রথম উপজাতি বিদ্রোহের নাম চুয়াড় বিদ্রোহ।

২.১.১০ তরিকা- ই- মহাম্মদিয়া কথার অর্থ কী?

উত্তরঃ তরিকা- ই- মহাম্মদিয়া কথাটির অর্থ হল, মহম্মদ প্রদর্শিত পথ।

২.১.১১ দেবী সিংহ কে ছিলেন?

উত্তরঃ দেবী সিংহ ছিলেন কোম্পানি কর্তৃক নিযুক্ত রংপুরের ইজারাদার।

উপবিভাগ-২.২

● ঠিক বা ভুল নির্ণয় কর।

২.২.১ মুন্ডারা দইসাতে স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছিল।

উত্তরঃ ঠিক।

২.২.২ দামিন-ই-কোহীতে কোল সংঘটিত হয়।

উত্তরঃ ভুল।

২.২.৩ সৈয়দ আহমদ বালাকোটের যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন।

উত্তরঃ ঠিক।

২.২.৪ নিজেকে বাদশা ঘোষণা করেছিলেন মির নিসার আলি।

উত্তরঃ ঠিক।

২.২.৫ কোল বিদ্রোহের পর ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন পাস হয়।

উত্তরঃ ভুল।

উপবিভাগ- ২.৩

● 'ক' স্তম্ভের সঙ্গে 'খ' স্তম্ভ মেলাও।

২.৩.১ পাইকান জমি - (ক) নীল বিদ্রোহ

২.৩.২ খুঁতকাঠি - (খ) চুয়াড় বিদ্রোহ

২.৩.৩ এলাকা চাষ - (গ) সাঁওতাল বিদ্রোহ

২.৩.৪ খেরওয়ারি হুল - (ঘ) মুন্ডা বিদ্রোহ

উত্তরঃ ১>খ, ২>ঘ, ৩>ক, ৪>গ

উপবিভাগ ২.৪

● প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত করো ও নাম লেখো।

২.৪.১ কোল বিদ্রোহের এলাকা ছোটনাগপুর।

২.৪.২ নীল বিদ্রোহের কেন্দ্র নদীয়া।

২.৪.৩ নীল বিদ্রোহের অন্যতম কেন্দ্র যশোর।

২.৪.৪ চুয়াড় বিদ্রোহের এলাকা।

২.৪.৫ মুন্ডা বিদ্রোহের এলাকা।

উপবিভাগ ২.৫

● নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যাটি নির্বাচন করো।

বিভাগ 'গ'

৩. দুটি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।

৩.১ তিতুমীর স্মরণীয় কেন?

উত্তরঃ তিতুমীরের প্রকৃত নাম হল মীর নিসার আলী। ওয়াহাবি আন্দোলন চলাকালে বাংলায় শোষিত কৃষকদের নিয়ে ব্রিটিশ ও জমিদার বিরোধী বারাসাত বিদ্রোহ সংঘটিত করেছিলেন তিনি। এই কারণে তিতুমীর স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।

৩.২ চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব কী?

উত্তরঃ ইংরেজ সরকারের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দে রাণী শিরোমণি, দুর্জন সিং, গোবর্ধন দিকপতি প্রমুখের নেতৃত্বে চুয়াড় বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এই বিদ্রোহের গুরুত্ব হল-

(১) বিদ্রোহের কারণে ব্রিটিশ সরকার ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, মানভূম প্রভৃতি অঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল জেলা গঠন করে।

(২) অল্প খাজনার বিনিময়ে চুয়াড়দের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত করে সরকার।

(৩) চুয়াড়দের নিয়ন্ত্রিত করতে ব্রিটিশ সরকার তাদের শাসন নীতিতে বিস্তর পরিবর্তন ঘটায়।

৩.৩ ফরাজি আন্দোলন কি নিছক ধর্মীয় আন্দোলন ছিল?

উত্তরঃ আরবি শব্দ ফরজ থেকে ফরাজি কথাটির উদ্ভব (যার অর্থ হল আল্লাহ কর্তৃক নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য)। আন্দোলনের প্রধান নেতা হাজী শরীয়তুল্লাহ ফরাজী আদর্শে ভারতকে দার-উল-হারব (বিধর্মীদের দেশ) থেকে দার-উল-ইসলাম (ইসলামের দেশ)-এ পরিণত করতে চেয়েছিলেন।

ফরাজী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা জমিদার, মহাজন, নীলকর ও তাদের মদতদাতা ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দু মুসলমান উভয় কৃষকদের স্বার্থে আন্দোলনকে সংগঠিত করেছিল। তাই একে নিছক ধর্মীয় আন্দোলন বলা যায় না।

৩.৪ সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হল কেন?

উত্তরঃ ভারতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রথম কৃষক বিদ্রোহ হলো সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ (১৭৬৩ - ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ)। এই বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ গুলি হল-

(১) অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যোগ্য নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক ত্রুটি ,

(২) সুনির্দিষ্ট আদর্শ ও সম্প্রীতির অভাব,

(৩) উপযুক্ত সমরাস্ত্রের ঘাটতি, ইত্যাদির কারণে দীর্ঘ চার দশক ধরে চলতে থাকা সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

৩.৫ নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারীদের কিরূপ ভূমিকা ছিল?

উত্তরঃ ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসন ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে বাংলার চাষীরা নীল বিদ্রোহ সংগঠিত করেছিল। খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতে আগত খ্রিস্টান মিশনারীরা এই বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

(১ নীল বিদ্রোহীদের সমর্থন ও সহানুভূতি প্রদান।

(২) সংবাদপত্রের মধ্য দিয়ে চাষীদের উপর হওয়া নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ও নির্যাতনের কাহিনী প্রকাশ।

(৩) গণশিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে ভারতীয়দের আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি ও শৃঙ্খলা মুক্তি ঘটানো।

(৪) সাহিত্যের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপের সমালোচনা করা।

৩.৬ দুদুমিয়া স্মরণীয় কেন?

উত্তরঃ দুদুমিয়া ছিলেন বাংলার ফরাজি আন্দোলনের একজন দক্ষ সংগঠক। তাঁর আসল নাম হল মহম্মদ মহসিন বা মুসিন।

পিতা হাজী শরীয়তুল্লাহের মৃত্যুর পর দুর্ধর্ষ লাঠিয়াল বাহিনী গঠন ও গুপ্তচর নিয়োগের মাধ্যমে ফরাজী আন্দোলনকে শক্তিশালী করেছিলেন তিনি। "জমির মালিক আল্লাহ"- এই ছিল তাঁর বাণী।

৩.৭ নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর কী ভূমিকা ছিল?

উত্তরঃ ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত নীল বিদ্রোহের সমর্থনে যেসকল শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিলেন হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও তাঁর সম্পাদিত হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকার ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

(১) হরিশচন্দ্র মুখার্জি তাঁর সম্পাদিত পত্রিকায় 'নীল জেলা' বিভাগে নীলকরদের অমানবিক অত্যাচারের কাহিনী প্রকাশ করে বিদ্রোহের পক্ষে জনমত গঠন করেন। ।

(২) নীলচাষীদের সার্বিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি মামলা-মোকদ্দমার খরচও বহন করতেন হরিশচন্দ্র।

৩.৮ নীলকররা চাষীদের কিভাবে অত্যাচার করত?

উত্তরঃ বাংলার নীল চাষীদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিবরণ দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক, হরিশচন্দ্র মুখার্জি সম্পাদিত হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা সহ সমকালীন বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সাহিত্যে প্রকাশ পেয়েছিল। নীল চাষে অবাধ্য চাষীদের নীলকর সাহেব ও তাদের অনুগত কর্মচারীরা প্রহার, গৃহপালিত পশু লুঠ, গৃহে অগ্নিসংযোগ, আটক এমনকি হত্যা পর্যন্ত করত। চাষীর ঘরের স্ত্রী-কন্যারাও এর থেকে রেহাই পেত না।

বিভাগ 'ঘ'

৪. সাত বা আটটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও

৪.১ ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য কী ছিল?

■ উত্তরঃ ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য:

● ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর ঔপনিবেশিক সরকার এদেশের বিশাল বনজ সম্পদকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৮৬৫, ১৮৭৮ ও ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে পরপর তিনটি ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন প্রণয়ন করে। এই আইন প্রবর্তনের উদ্দেশ্য গুলি ছিল-

(১) আদিবাসীদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা:

ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে ভারতের আদিবাসী জনগোষ্ঠী বন থেকে কাঠ ,ফল-মূল, পশু-পাখি ইত্যাদি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করত। সরকার অরণ্য আইন জারি করে আদিবাসীদের ব্রিটিশ আশ্রিত করে তুলতে চেয়েছিল।

(২) জাহাজ নির্মাণ:

সাম্রাজ্য বিস্তার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে ব্রিটিশ নৌ-বাহিনীতে জাহাজের প্রয়োজন ছিল। সেই চাহিদা পূরণ করা ছিল ভারতে অরণ্য আইন প্রবর্তনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

(৩) রেলপথের প্রসার:

লর্ড ডালহৌসির আমল থেকে ভারতে রেলপথ স্থাপনের কাজ ব্যাপকভাবে শুরু হয়। রেলের বগি, স্লিপার ইত্যাদি তৈরিতে কাঠের দরকার পড়লে সরকার এদেশের অরণ্যের দিকে নজর দেয়।

(৪) অর্থনৈতিক উন্নতিসাধন:

দামি কাঠ, পশুর মাংস, চামড়া, হাতির দাঁত ইত্যাদি মূল্যবান অরণ্য সম্পদ ব্রিটিশদের অধীনে চলে এলে সরকারের অর্থকোশ ফুলেঁপে উঠবে।

(৫) বিনোদন:

পশুশিকারের দ্বারা 'দুঃসাহসিক' ক্ষমতা প্রদর্শন ছাড়া অফিস ও বাসস্থানের আসবাবপত্রের চাহিদা মেটাতে ব্রিটিশ সরকার ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন প্রণয়ন করে।

৪.২ নীল বিদ্রোহে সংবাদপত্রের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

■ উত্তরঃ নীল বিদ্রোহে সংবাদপত্রের ভূমিকা:

● সূচনা: ব্রিটিশ শাসিত ভারতে সরকার ও তার মদতপুষ্ট নীলকর সাহেবদের অমানবিক শোষণ-অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষকরা ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে যে বিদ্রোহ সংঘটিত করেছিল তা নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহ সংঘটিত করার পশ্চাতে সমকালীন সংবাদপত্র গুলি যে ভূমিকা পালন করেছিল তার নিম্নে বর্ণিত।

(১) নীলকরদের অত্যাচার: নীলচাষ কৃষকদের জন্য একটি অলাভজনক চাষ হলেও নীলকর সাহেবরা নীল ব্যবসায় প্রচুর অর্থ উপার্জন করত। তাই নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য অনিচ্ছুক চাষীদের নীল চাষে বাধ্য করতে নীলকররা কৃষক ও তার পরিবারের উপর অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন করত। এই অত্যাচারের কাহিনী সমকালীন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতো।

(২) সরকারি উদাসীনতা: নীলকর সাহেবদের দ্বারা অত্যাচারিত অসহায় কৃষকদের কথা জেনেও ব্রিটিশ সরকার চাষীদের স্বার্থে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কারণ, নীলকরদের নীল ব্যবসার লাভের একটা বড় অংশ সরকারের কোষাগারে জমা হত। সরকারের এই জঘন্য নীতির সমালোচনা করে সমকালীন সংবাদপত্র গুলি।

(৩) প্রতিবাদ জ্ঞাপন: অক্ষয় কুমার দত্তের তত্ত্ববোধিনী, হরিশচন্দ্র মুখার্জির হিন্দু পেট্রিয়ট, ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর প্রভৃতি পত্রিকা বাংলার চাষীদের প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছিল।

(৪) সহায়তা প্রদান: তৎকালীন বাংলার কিছু হৃদয়বান ব্যক্তি নীল চাষীদের অভাব দূরীকরণে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি মামলা-মোকদ্দমার খরচ ও বহন করতেন। হরিশচন্দ্র মুখার্জি ছিলেন এ কাজে অগ্রগণ্য ব্যক্তি।

(৫) বিদ্রোহে উৎসাহ দান: বাংলার মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজ সংবাদপত্রে লিখিত মাধ্যমে এবং গ্রামে-গঞ্জে চাষীদের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে এসে বিদ্রোহে উৎসাহিত করেন। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, শিশির কুমার ঘোষ প্রমুখরা শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

৪.৩ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন?

■ উত্তরঃ সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণসমূহ:

● সূচনা: ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অপশাসনের বিরুদ্ধে যে সব আদিবাসী বিদ্রোহ গুলি সংঘটিত হয়েছিল ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল তার মধ্যে অন্যতম। এই বিদ্রোহ সংগঠিত হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ লিপ্ত ছিল। কারণ গুলি হল-

(১) এক ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন: এদেশের অরণ্য সম্পদকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার পরপর তিনটি অরণ্য আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের ফলে 'অরণ্যের সন্তান' আদিবাসীরা পশুশিকার, ফলমূল ও কাঠ সংগ্রহের অধিকার হারায়। এই কারণে তারা বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়।

(২) সরকারি নির্যাতন:

ব্রিটিশ শাসন আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনে অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছিল। সরকার ও তার কর্মচারীদের অমানবিক শোষণ ও অত্যাচার সাঁওতাল বিদ্রোহ যেতে বাধ্য করেছিল।

(৩) দিকুদের শোষণ:

বহিরাগত মহাজন ও ব্যবসায়ীরা আদিবাসীদের কাছে দিকু নামে পরিচিত ছিল। দিকুরা সহজ-সরল সাঁওতালদের উপর অতিরিক্ত করারোপ, বেগার শ্রম, ঋণের দায়ে অপদস্ত করলে তারা বিদ্রোহে অবতীর্ণ হয়।

(৪) প্রতারণা:

লর্ড ডালহৌসির আমলে রাজমহল, রামপুরহাট, ভাগলপুর প্রভৃতি এলাকায় রেলপথ নির্মাণের কাজে নিযুক্ত সরকারের কর্মচারী ও ঠিকাদারেরা অশিক্ষিত সাঁওতালদের কম মজুরি প্রদান ও গৃহপালিত পশু হস্তান্তর করে তাদের প্রতারণা করত।

● মূল্যায়ন: উপরিউক্ত কারণে শান্ত স্বভাবের সাঁওতালরা ব্যাপকভাবে অশান্ত হয়ে ওঠে। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে জুন ভাগনাডিহির মাঠে প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরবের নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহ সংঘটিত করে।

৪.৪ টীকা লেখো: কোল বিদ্রোহ।

■ উত্তরঃ কোল বিদ্রোহ:

● ভূমিকা:

উনিশ শতকের মধ্যভাগে ভারতে ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে যেসব বিদ্রোহগুলি সংঘটিত হয়েছিল ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দের কোল বিদ্রোহ ছিল তার মধ্যে অন্যতম। বিহারের ছোটনাগপুর, রাঁচি, সিংভূম প্রভৃতি অঞ্চলে ব্রিটিশ সরকার ও তাদের মদতপুষ্ট মহাজনদের বিরুদ্ধে কোলরা এই বিদ্রোহ সংগঠিত করেছিল।

● বিদ্রোহের কারণ: কোল বিদ্রোহ সঙ্ঘটিত হওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ নিহিত ছিল। এগুলি হল-

(১) উচ্চ হারে রাজস্ব আদায়:

কোলদের এলাকায় বহিরাগত মহাজনেরা (দিকু) উচ্চহারে রাজস্ব ও একাধিক কর আদায় করতে শুরু করলে কোলরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

(২) আফিম চাষে বাধ্য করা:

নানাবিধ উচ্চ রাজস্ব ও কর দিতে অসমর্থক কোলদের অলাভজনক আফিম চাষে বাধ্য করা হত। ফলে তারা দিকুদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

(৩) বেগারশ্রম:

ব্রিটিশ আমলে সরকারি স্বার্থে নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ শুরু হয়। এই কাজে সাদাসিধে কোলদের বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য করলে তারা সরকার বিরোধী হয়ে পড়ে।

(৪) সীমাহীন শোষণ ও অত্যাচার:

রাজস্ব প্রদান ও সরকারি আইনের প্রতিপালন যথাযথভাবে না করার অপরাধে সরকারি কর্মচারী ও সহযোগী মহাজনরা কল উপজাতির নারী-পুরুষদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার ও নির্যাতন করত।

(৫) মদের উপর উচ্চকর:

পরিশ্রমী কোলদের কাছে মদ ছিল একটি নিত্য প্রয়োজনীয় পানীয়। সরকার মদের ওপর অতিরিক্ত পরিমাণে কর চাপিয়ে দিলে তারা অসন্তুষ্ট হয়।

● বিদ্রোহের সূচনা:

উপরিউক্ত ঘটনার প্রতিবাদে বুদ্ধ ভগত, জোয়া ভগত, সুই মুন্ডা প্রমুখের নেতৃত্বে কোলরা একত্রিত হয়ে ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে রাঁচিতে প্রথম বিদ্রোহের সূচনা ঘটায়।

● বিদ্রোহের বিস্তার:

কোল বিদ্রোহ সিংভূম, মানভূম, হাজারীবাগ, পালামৌ প্রভৃতি এলাকায় বিস্তার লাভ করে।

● বিদ্রোহের ব্যাপকতা:

বিদ্রোহ চলাকালে কোলরা জমিদার, জোতদার, ব্যবসায়ী ও মহাজনদের হত্যা করে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। অনেক মহাজন কুল দেবতার সম্মুখে বলির শিকার হয়।

● বিদ্রোহ দমন:

১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে সরকার ক্যাপ্টেন উইলকিনস এর নেতৃত্বে এক বিশাল সেনাবাহিনীর সাহায্যে নিষ্ঠুর হত্যালীলা চালিয়ে কোল বিদ্রোহ দমন করে।

● মূল্যায়ন: তীব্র দমন নীতিতে কোল বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে এই বিদ্রোহ সফল। কোল জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদানের লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে একটি পৃথক ভূখণ্ড নির্দিষ্ট করে তার নাম দেয় দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি।

(বিঃ দ্রঃ কোল বিদ্রোহের কারণ স্বতন্ত্র প্রশ্ন হলে সূচনা, কারণ ও মূল্যায়ন লিখবে। আর টীকা লিখতে বললে কারণের শিরোনাম গুলো পূর্ণ বাক্যে রূপ দেবে। ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাহলেই উত্তর ছোট হয়ে যাবে।)